তোকমা ও ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় - খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়

আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদেরকে তোকমা এবং ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় এবং এগুলো কিভাবে খেতে হবে কখন খেতে হবে সঠিক পদ্ধতি কি কোন সমস্যাগুলো দূর করে সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব। তাই শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।
তোকমা-ও-ইসবগুলের-ভুসি-খেলে-কি-হয়
এই আর্টিকেলের সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ টপিক হচ্ছে তোকমা এবং ইসবগুলের ভুসির কি কি উপকারিতা রয়েছে তা নিয়ে। যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি না পড়েন তাহলে শুধু উপকারিতা পড়লেই বুঝতে পারবেন যে তোকমা এবং ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা কতটুকু।

পেজ সূচিপত্রঃ তোকমা ও ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়

ইসবগুলের ভুসি এবং তোকমা একসাথে খাওয়ার সঠিক নিয়ম - তোকমা ও ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়

এক গ্লাস পানিতে এক চামচ তোকমা ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন তারপর এক চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে নিবেন। এটাই সঠিক নিয়ম। অনেকে আছেন যারা তোকমা ভিজানোর পর ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলেন এতে আপনি তোকমার উপকারিতা পাবেন কিন্তু ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা পাবেন না। 

এজন্য অবশ্যই একটি পরিষ্কার গ্লাসে বিশুদ্ধ পানিতে এক চামচ তোকমা ভিজিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর সেই পানিতে ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খাবেন এটাই হচ্ছে সঠিক নিয়ম একসাথে ইসবগুল এবং তোকমা খাওয়ার।

ইসবগুলের ভুসি কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়

এক গ্লাস পরিষ্কার পানিতে ১-২ চামচ ইসবগুলের ভুসি  ভিজিয়ে চামচ দিয়ে হালকা নাড়াচাড়া করার পর সাথে সাথে খেয়ে ফেলবেন গবেষকদের মতে এটাই আদর্শ নিয়ম ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার। তবে বেশিরভাগ মানুষ রাতে ভিজিয়ে রাখে সকালে খায় এতে কোন সমস্যা হবে না খেতে পারবেন কিন্তু এর পুষ্টিগুণ থাকেনা।

কারণ ইসবগুলের ভুসি পাকস্থলীতে গিয়ে ফুলে ময়লা আবর্জনা বের করতে সাহায্য করে। আপনি যদি এটা সারারাত ভিজিয়ে রাখেন এর ফলে এটা আগে থেকেই ফুলে আছে পাকস্থলীতে গিয়ে কতটুকুই বা উপকার হবে। তাই নিশ্চিন্তে বলা যায় এটা খাওয়ার উপযুক্ত সময় পানির সাথে ভিজিয়ে সাথে সাথে খাওয়া।

তোকমা কত সময় ভিজিয়ে রাখতে হয় 

আপনি এক গ্লাস পানিতে ২-৩ চামচ তোকমা ভিজিয়ে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট ঢেকে রেখে দিবেন যাতে কোনো পোকা বা ময়লা না পড়ে। এরপর আপনার পছন্দ এবং স্বাদ অনুযায়ী কিছুটা চিনি এবং মধু মিশিয়ে দিলেন অথবা চিনির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে আপনি খেলেন।
অনেকে আছে যারা রাতে তখন মা ভিজিয়ে রাখেন এবং সকালে উঠে খান এটাও করতে পারবেন কোনো সমস্যা হবে না। অথবা আপনি রাতে ভুলে গেলেন তোকমা ভেজাতে সকলে মনে পড়েছে আপনি তখন এক গ্লাস পানিতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট তোকমা ভিজিয়ে খেলেন।

আপনি যদি চান তাহলে এর সাথে ইসবগুলের ভুসি বেশি খেতে পারবেন। তবে তোকমা ভেজানোর আধা ঘন্টা পরে আপনি যখন পানিটা খাবেন তার এক দুই মিনিট আগে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে নিবেন তারপর খেয়ে নিবেন। এটাই আদর্শ নিয়ম তোকমা এবং ইসবগুলের ভুসি একসাথে খাওয়ার।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে

আমরা অনেকেই সকালে অথবা রাতে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকে। এটার অনেক উপকারিতা রয়েছে। আমরা অনেকে মনে করি যে এটা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে পেট পরিষ্কার করে হ্যাঁ এটা সঠিক কিন্তু শুধু এই দুইটাই উপকারিতা আছে এমনটা নয় বরং ইসবগুলের ভুসির আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। কি কি উপকারিতা রয়েছে ইসবগুলের ভুসিতে এবং এটি খেলে কি হয় তা নিচে উপস্থাপনা করা হলো। 

  • ইসবগুলের ভুসি খেলে আপনার বুকের জ্বালাপোড়া কমাবে। 
  • ডায়রিয়া দূর করে 
  • মোটা মানুষের চর্বি গলাতে সাহায্য করে।
  • যাদের ব্লাড সুগার আছে তাদের ইসবগুলের ভুসি খাওয়া দরকার।
  • যাদের আমাশয় রয়েছে তারা ইসবগুলের ভুসি খাবেন। এটি আপনার পাকস্থলীর জীবাণু ধ্বংস করবে এবং পেট পরিষ্কার করবে।
  • যাদের ব্লাড প্রেসার আছে তাদের জন্য উপকার।
  • হজমের সমস্যা হলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন।
  • যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বুক জ্বালাপোড়া করে তাদের ইসবগুলের ভুসি খাওয়া প্রয়োজন কারণ এটি আপনার পাকস্থলীকে এসিডিটির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে।
  • যদি কারো কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয়ে থাকে তাহলে তারা ইসবগুলের ভুসি খাবেন। 
  • যারা পাতলা হতে চান তারা ইসবগুলের ভুসি খাবেন।

তোকমা দানা খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে

তোকমা দানার উপকারিতা অনেক। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, বিভিন্ন ভিটামিনে গঠিত এই বীজ। যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে কি উপকারিতা রয়েছে তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো।

  • ওজন কমাতে তোকমা দানা সাহায্য করে। এতে প্রচুর আঁশ রয়েছে যা বাড়তি ক্ষুধা দূর করে। 
  • গরমকালে তাপ কমাতে তোকমা সাহায্য করে। 
  • রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে তোকমা সাহায্য করে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের অবশ্যই তোকমা খাওয়া উচিত।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • হজমের সমস্যা দূর করে। 
  • এসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে। পেটের এসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
  • শরীরকে ঠান্ডা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 
  • যাদের চোখের নিচে জ্বালাপোড়া করে হাত পায়ে জ্বালাপোড়া করে তাদের তোকমা খাওয়া উচিত।
  • পানি শূন্যতা দেখা দিলে তোকমা খাওয়া উচিত। 
  • ত্বক এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে তোকমা অনেকটাই ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
  • উচ্চ রক্তচাপ যাদের রয়েছে তারা তোকমা খেতে পারেন।
  • লিভার ভালো রাখার জন্য তোকমা খেতে পারেন।
  • হার্ট এবং কিডনি ভালো রাখতে তোকমা দানা খেতে পারেন।

খালি পেটে তোকমা খেলে কি হয়

আপনার পেট পরিষ্কার রাখবে, অতিরিক্ত ক্ষুধা কমাবে, এসিডিটির হলে তা কমিয়ে দিবে, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো বড় একটি সমস্যা দূর করবে, আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে, আপনার শরীর সারাদিন সতেজ থাকবে ঠান্ডা থাকবে, আপনার শরীরের তাপমাত্রা কি নিয়ন্ত্রণে রাখবে। তোকমা যে কোনো সময় খেতে পারবেন কোনো সমস্যা নাই উপকার সবখানেই পাবেন। 

আপনি চাইলে ভরা পেটেও খেতে পারবেন অথবা খালি পেটেও খেতে পারবেন। দুইভাবে এর উপকারিতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। তাই কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে সকালেই খেতে হবে রাতে খাওয়া যাবে না বা রাতে খেতে হবে সকালে খাওয়া যাবে না এরকম না যখন ইচ্ছা যখন মনে পড়ে তখন এটা খাবেন। নিয়মিত না একদিন পরপর খাবেন।
তোকমা-ও-ইসবগুলের-ভুসি-খেলে-কি-হয়
অনেকে আছেন যারা তোকমা রাতে ভিজিয়ে রেখে দেন সকালে খাওয়ার জন্য এতে কোনো সমস্যা নাই এভাবেও আপনি খেতে পারবেন। আবার আপনি চাইলে সকালেও ভিজিয়ে খেয়ে নিতে পারেন ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলেন। 

কারণ তোকমা ফুলতে একটু সময় লাগে। এটি ইসবগুলের ভুসির মতো নয় যে পানিতে দেওয়ার সাথে সাথে ফুলে যায়। তাই তোকমা বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে কোনো সমস্যা নাই দেরি করে খেলে কোনো সমস্যা নেই। আপনি এটা ভরা পেটেও খেতে পারবেন খালি পেটেও খেতে পারবেন। তোমাকে নিয়ে ক্ষুধা ভাব কমে আসে এর ফলে আপনার পেট ভরা থাকবে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগবে না ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। 

খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় 

এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে সকালে খালি পেটে খাওয়া এটাই আদর্শ সময়। অন্যান্য যে কোনো সময় আপনি খেতে পারবেন কোন বাধা-নিষেধ নেই। আপনি রাতে ঘুমানোর আগে খেয়ে নিতে পারবেন অথবা বিকালে খেতে পারবেন। তবে সকালে খালি পেটে খাওয়ায় বেশি ভালো। পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে ইসবগুলের ভুসি বিশেষ ভূমিকা রাখে। সকালে খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে পাকস্থলী পরিষ্কার থাকে শরীরের চর্বি এবং কোলেস্টেরলের মাত্র কমায়। 

ইসবগুলের ভুসি পানি শোষণ করে থাকে যার ফলে আপনি যদি সকালে এটি খান তাহলে আপনার শরীরের হাইড্রেশন রোধ করবে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠার পর এক ক্লাস পানিতে দুই থেকে তিন চামচ লেবুর রস মিশিয়ে অথবা আপনার স্বাদ অনুযায়ী মধু বা চিনি মিশিয়ে খালি পেটে খাওয়ায় উত্তম। এটি অতিরিক্ত ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে ডায়রিয়া দূর করে হজম শক্তি বাড়ায়।

ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম 

আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে তোকমা দানা খেতে পারেন কারণ এটি আপনার বাড়তি ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে শরীরকে সুস্থ রাখা অনেক জরুরী। অনেকে মনে করেন তোকমা খেলে ওজন বেড়ে যায় না এমনটা নয় বরং আপনি যদি তোকমা খান তাহলে ওজন কমবে। 

তবে হ্যাঁ মনে রাখবেন অতিরিক্ত খাবেন না কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা। ওজন কমানোর জন্য তোকমা একটি দারুন বীজ। এটি আপনি শরবত করেও খেতে পারবেন পানিতে মিশিয়েও খেতে পারবেন। এটি আপনার রক্তে ভালো কোলেস্টরল তৈরি করে। 

কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি পেতে ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খাবেন 

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি ভয়াবহ রোগ। এই রোগ যদি ভালো না হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত মানুষকে অপারেশন করতে হয়। তাই এই ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি এর ফল পাবেন। কেন খাবেন ইসবগুলের ভুসি কোনো লাভ হবে কি? হ্যাঁ লাভ হবে। ইসবগুলের ভুসি আপনার পাকস্থলীতে ফুলে ভেতরের সৌন্দর্য বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করবে।
পরিপাকতন্ত্র থেকে পানি গ্রহণ করে মলের ঘনত্বকে বাড়িয়ে দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। যারা দীর্ঘদিন ধরে এ রোগে ভুগছেন তারা ইসবগুলের ভুসি রাতে ঘুমানোর আগে খাবেন। যখন আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ ভালো হয়ে যাবে তারপর আর খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ রয়েছে তারা এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম দুধে দুই থেকে তিন চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে চামচ দিয়ে হালকা নাড়াচাড়া করে ঢেকে রেখে দেবেন পাঁচ থেকে দশ মিনিট। তারপর সেটি খেয়ে ফেলবে। অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে খাবেন।

লেখকের শেষ কথা - তোকমা ও ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়

নিশ্চয়ই আপনি এখন জানতে পেরেছেন যে তোকমা এবং ইসবগুলের ভুসিতে কত উপকার রয়েছে। অবশ্যই নিয়ম মেনে এগুলো খাবেন অতিরিক্ত খাবেন না। তোকমা এবং ইসবগুলের ভুসি একসাথে খেলে কোনো সমস্যা নেই। চেষ্টা করবেন খালি পেটে এগুলো খাওয়ার। এই আর্টিকেলে তোকমা এবং ইসবগুলের ভুসি কখন খাবেন কিভাবে খাবেন কতটুকু খাবেন এটা খেলে ওজন বাড়বে না কমবে এটা নিয়মিত খেতে হবে কিনা এটা খেলে কি কি উপকার হবে এবং কি কি সমস্যা থেকে দূরে থাকবেন এই সব কিছু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এরকম স্বাস্থ্যকর আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন  আপনাদেরকে সঠিক তথ্য দেওয়াই আমাদের কাজ তাই ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অনেস্ট ইনকয়ারি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url